শাহীন ইবনে দিলওয়ার- এর ছড়া
শাহীন ইবনে দিলওয়ার জন্মঃ ২৮শে ফেব্রুয়ারি ১৯৬১ পিতাঃ দিলওয়ার খান (বাংলা একাডেমি ও একুশে পদক প্রাপ্ত কবি দিলওয়ার) মাতাঃ আনিসা খাতুন স্থায়ী ঠিকানা: কবি দিলওয়ার ফাউন্ডেশন, খান মঞ্জিল, ভার্থখলা, সিলেট। যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী আশির দশকের কবি, ছড়াকার ও গল্পকার। তারুণ্যে স্থানীয়, জাতীয় পত্রপত্রিকায়, সাময়িকীতে নিয়মিত লেখালেখি। আশির দশকের শেষের দিকে জীবিকার দায়ে ইউরোপে গমন ও নব্বইয়ের মাঝামাঝি যুক্তরাষ্ট্রে প্রবাস জীবনে দীর্ঘ বিরতি লেখালেখিতে। দু'হাজার পাঁচের দিকে বাবা কবি দিলওয়ার,ভাই কবি কিশওয়ার ইবনে দিলওয়ার ও সহধর্মিণী সুলতানা পারভীনের উৎসাহে লেখালেখিতে প্রত্যাবর্তন। দাদীমা রহিমুন্নেসার সুললিত কণ্ঠে পুথি পাঠ কিশোরকালে মন্ত্রমুগ্ধ হয়ে শুনতেন। বাবা কবি দিলওয়ার ও চাচাতো ভাই কাদের নওয়াজ খানের সাথে প্রতিদিন ছড়াকাটার স্মৃতি এখনো উজ্জ্বল। তাঁর পক্ষে অতীতের ছড়াগুলো প্রবাসী হওয়ায় রক্ষা করা সম্ভব হয়নি। নিউইয়র্কে বসবাসরত লেখকের প্রকাশিত গ্রন্থগুলো: কাব্যি(নাটক,২০০৭), ছায়াদেহ(গল্পগ্রন্থ,২০১২), সময়ের কঠিন বিবরে(কাব্যগ্রন্থ,২০১২), এই তত্ত্ব শাহীন প্রবাসীর(কাব্যগ্রন্থ, ২০১৭), অনন্ত মৃত্যু থেকে উদিত জীবন(কাব্যগ্রন্থ,২০২০) যাযাবরের হাজার ছড়া(২০২১)।
এই সপ্তাহের ছড়া
বর্ণমালা যাদু মাখা
স্বপ্নে গেলো ঘুরতে খোকন
অচিনপুরের দেশে
রাজকন্যা খবর পেয়ে
আসলো কাছে হেসে।
বললো তুমি গান শোনাবে?
তোমার দেশের গান
বললো খোকন বাংলা ভাষা
পেলাম দিয়ে প্রাণ।
সেই ভাষাতে গাইতে পারি
শুনতে রাজি হ'লে
রাজকন্যা হাঁ বললো
সেই খুশীতে দোলে।
বর্ণমালা যাদু মাখা
গানের বাঁকে বাঁকে
রাজকন্যা মুগ্ধ হয়ে
বাসলো ভালো তাকে।
একটু মজা বেশী
মায়ের হাতে খাবে বলে
বললো খিদে নেই
বাবা তখন ভেবে মরে
খেতে কি যে দেই?
মজার মজার খাবার দিলো
পানসে করে মুখ
খোকন সেটা ফেললো খেয়ে
নেই যে মনে সুখ!
অফিস থেকে মা ফিরলো
বললো খোকন আয়
ভাত বেড়ে দেই কি খেয়েছিস?
দৌড়ে খোকন যায়।
মা মণিটা খাবার দিলে
হয়না খাওয়া শেষ-ই
বাবার চেয়ে মায়ের হাতে
একটু মজা বেশী।
বিশাল আকাশ রঙ বদলায়
বিশাল আকাশ রঙ বদলায়
শুভ্র সুনীল কালো
ভোর বেলা ও গোধূলিতে
হয় সে গাঢ় লালও।
কখনো সে রঙ মিশিয়ে
নানা রঙেও সাজে
এক টুকরো স্বচ্ছ নীল
সাদা মেঘের মাঝে।
নীলে আকাশ ভালো লাগে
কালোতে মন কালো
রোদ ঝলমল নীল আকাশ
দেখতে লাগে ভালো।
আকাশ তুমি রাগও করো
হও যে কালো ঘনো
আছে তোমার সুখের সময়
আছে দুখের ক্ষণও।
বেলাশেষে লাল ও নীলে
দেখতে তোমায় পেলে
স্বপ্নগুলো রঙিন হয়ে
উড়েও পাখা মেলে।
আজব আজব স্বপ্ন দেখে
স্বপ্নে গেলাম কোথায় কোথায়?
গেলাম নিজের বাড়ীতে
গোঁফ দাঁড়িতে চিনলোনা কেউ
তেল পড়েনি হাঁড়িতে।
তারপরে যাই শ্বশুর বাড়ী
আদর যত্ন পেলাম না
চিনতে কেনো পারলোনা তাই
রাগ দেখিয়ে খেলাম না!
তারপরে হই ভুয়া পুলিশ
উর্দি পরেই জোশ পেতে
যাকে দেখি দাঁড় করিয়ে
করি শুরু দোষ পেতে!
ইভটিজিং-এর ছেলেটিতো
আস্ত গাড়ল ঘাড়-ত্যাড়া
বলতে কিছু তেড়ে এলো
প্রেমের নেশায় তার-ছেঁড়া।
ভাবছি তখন ফিরবো যখন
ঝাপটে ধরে উড়বো ঠিক
মহাশূন্যে ভাসিয়ে দিলে
থাকবেনাতে দিক্বিদিক!
চাপটা দিতে বললো ফেলে
মনের কথা কই কাকে?
আমি যাকে ভালোবাসি
সে চায় বড়ো ভাইটাকে!
আজব আজব স্বপ্ন দেখে
ঘুম ভাঙ্গতেই যন্ত্রণা
গিন্নী দিলেন ফর্দ বাজারের
জলদি আনার মন্ত্রণা!
রক্ত দিয়েই দু'টোকে পাওয়া
স্বাধীনতা নয় দয়া দাক্ষিণ্য
বাংলা ভাষাও তাই
রক্ত দিয়ে দু'টোকেই পাওয়া
এরতো তুলনা নাই।
আগলে রাখতে প্রতিজ্ঞা করো
প্রহরী সবাই হবে
শত্রু তখন পিছিয়ে যাবে
ভয় পেয়ে দূরে র'বে।
ঐক্যে ফাটল কেড়ে নিতে পারে
লহুজাত স্বাধীনতা
পরাধীন হলে ভাষাও কাড়বে
থাকবেনা মুখে কথা।