top of page
নির্ঝর নৈঃশব্দ্য.jpg

কবি নির্ঝর নৈঃশব্দ্য

জন্ম: ২৪ আগস্ট ১৯৮১, চকরিয়া, কক্সবাজার। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে চিত্রকলা বিষয়ে পড়ালেখা। ছবি আঁকাই মূল কাজ হলেও তিনি বর্তমান সময়ের একজন শক্তিশালী কবি,  প্রাবন্ধিক, কথাসাহিত্যিক।  যুক্তিসিদ্ধ দর্শন এবং ধ্রুপদ কাব্য শৈলী নিয়ে তাঁর রীতিপরিদৃষ্ট স্বতন্ত্র উত্তরণ  বাংলা সাহিত্যে ভিন্নমাত্রায় বিবেচিত। নির্ঝর সাহিত্যে সামগ্রিকভাবে একনিষ্ঠ সৃজনশীল কারিগর।

 

মুদ্রিত গ্রন্থ; ‘পাখি ও পাপ’ (২০১১, কবিতা), ‘শোনো, এইখানে বর্ষাকালে বৃষ্টি হয় (২০১১, মুক্তগদ্য), ডুবোজ্বর (২০১২, গল্প), কাপালিকের চোখের রং’ (২০১৩, কবিতা), ‘পুরুষপাখি’ (২০১৪, মুক্তগদ্য), ‘আরজ আলী : আলো-আঁধারির পরিব্রাজক’ (২০১৫, প্রবন্ধ), ‘মহিষের হাসি’ (২০১৫, কবিতা), ‘রাজহাঁস যেভাবে মাছ হয়’ (২০১৬, গল্প), ‘আকাশ ফুরিয়ে যায়’ (২০১৭, মুক্তগদ্য), ‘হুহুপাখি আমার প্রাণরাক্ষস’ (২০১৭, কবিতা), ‘উদ্ভিদ ও বৃন্দাবনী’ (২০১৯, কবিতা, ভারত থেকে প্রকাশিত), ‘কুসুমকুমার’ (২০১৯, মুক্তগদ্য), ফুলের অসুখ (২০২০, গল্প), কবিতালেখকের জার্নাল (২০২০, মুক্তগদ্য), আমি ও গেওর্গে আব্বাস (২০২০, মুক্তগদ্য),

সম্পাদিত বই : ‘ওঙ্কারসমগ্র : বঙ্গবন্ধুর নির্বাচিত ভাষণের শ্রুতিলিপি’ (২০১৭)।

সম্পাদিত ছোটোকাগজ : ‘ মুক্তগদ্য’ ।  সম্পাদিত অনলাইন পোর্টাল  www.kothaboli.com

কবিতা

নিঝুমগন্ধের দেশ

 

আগুন এমনই আরক—নিঝুমগন্ধের দেশে কেবলই বুনে চলে তৃষ্ণাতুর জলা। কুয়াশা নেমে গেলে সকল জলাশয়ে—নিশ্চিত জমে যায় ডাহুকির আরক্ত পদাবলি। আরো গভীরে নেমে মাছের খোঁজে গান ভেঙে দুখণ্ড হয়ে যায়, হয়ে যায় অসুস্থ চরাচর। শ্যাওলার ঘুম পাল্টে যায়, পাল্টে যায় শিরার গতি, কীটের অবদমিত উল্লাফ। পৃথিবীর বয়স কেঁপে উঠে সবুজাভ শ্লেষ্মায়।

 

 

অলিখিত পথ

 

শুরুই হলো না পতন। শিশিরের শ্বাসে ঢেকে গেলো জানালার কাচ। পৃথিবীর রেখা ধরে নেমে যাবো সেইসব পথ। সেই রূপ আর বিভা নিভে গেলে ফিরবো না, এই ভেবে শিশিরের নিশ্বাসে এঁকে রেখে যাবো যাকিছু বিষাদ। ঘনীভুত চোখে দেখি কাচের ওপারে বাতাসও কাঁপছে নিশাদ। এই শাণিত বাতাসে বাঁধা পড়ে গেছে চিরদিন হাওয়ার ছায়া। আমি ভাঙি একা অলিখিত পথের রেখা।

 

 

ঘৃতকুমারীর বন

 

পাল্টে যাওয়া রং আর ঘ্রাণের ভিতর সন্তরণ ভুলে যাই, ভুলে যাই মাছ, জিরাফের পদচ্ছাপ, কাঁচা রক্তের অমিত আস্বাদ। তরল অন্ধকারের ঘোর সহসা জ্বেলে দিলে অপরূপা বিদ্যুৎ—অনতিদূর বনের ঝাড়ে জমাই নিশ্বাস। নিশ্বাস কোন মুদ্রার চক্রমিত রূপ! জানে না একা ঘৃতকুমারীর বন। সেই বনে মুহূর্তেই অন্ধকারের গন্ধ অবিনশ্বর হয়ে যায়। ভাঁজ খুলে ভাঁজ করি ছায়াচ্ছন্ন রতিদল।

 

 

অক্ষরের বিষ

 

এই হরিণ প্রতি রাতে চুরি করে নিয়ে যায় অরণি। তোমরা ঘুরে ঘুরে ক্লান্ত। তার চেয়ে শিমপাতার রঙে শাদা শাড়ির পাড়ে এঁকে নাও মাছের চোখ ও কণ্টক, তার চোখের নিচের কালি। মাছ নিষ্পলক পাহারা দেবে প্রিয়তম কাম। অরণিকাঠে কিছুই লেখা থাকে না, কেবল ঘষা খেয়ে জ্বলে উঠতে পারে এক দান। এটা আসলে হরিণের খেলনাকাঠি। তোমরা তার চেয়ে উপগত হও নির্মোক অক্ষরে। অক্ষরের বিষে যে অমৃত ধরা আছে—খুঁজে নাও। এই হরিণ মায়ামৃগ।

 

 

উরুমূলে প্রাণ সঁপে রক্ত
 
সে সারাদিন স্তন পান করে রাতভর ঝিমায়
ভোরবেলা স্নান করে আড়াই ঘণ্টা নয় মিনিট
কেঁচো আর কাঁকনের জোড়হাতে পরে ঢেউ
খানিক জিরিয়ে নিয়ে সাঁতার ভুলে দাঁড়ায়
দুধঘুম চোখে জড়িয়ে বামহাতে ছাইপাশ
তার চাতালের নাম নেই জানা যাবে শেষে
সুগন্ধিধ শ্যাম্পুর বিলাস চুলের খেলায় ঝিকি
তার শরীর নিমের ডাল ছুঁয়ে পরিক্রান্ত সুখ
 
প্রেতিনী মৃতের সকল নৈঃশব্দ্য ভেঙে দেয়
প্রেতিনী শাদা আর কালো পূর্বপশ্চিম
আমি তার উরুমূলে প্রাণ সঁপে রক্তপান করি

 

 

জালপাশা (সনেট)

 

গরুগুলি ফিরে চলে গোধূলির গ্রামে

খুরে ও নিশ্বাসে ওড়ে ধূলি ধূলি রেণু

পৃথিবীর সব মাঠ বুকে এসে থামে

মাঠের বিথারে বাজে অবারিত বেণু

শূন্য আবেষ্টনে আমি ভাঙি পর পর

ভেঙে দিয়ে আনমনে বুনি জালপাশা

বৃশ্চিক বিলাস এসে বসে স্বয়ম্বর

উপুড় বালিশে নামে বাচাল কুয়াশা

কুয়াশামোড়ানো চাঁদে ফোটে কুঁচফুল

সুমন্দ্র শিশির ফাঁদে বাঁধা বারো মাস

কালির সংরাগে মাতে আঁধার আকুল

আধখানা ঘ্রাণে ছাই উত্তর আকাশ

ঝিরি ঝির ঝিরি ঝির আঁধারের চুল

ফিরে যেতে যেতে ক্ষয় যত অবকাশ

bottom of page